বদলে যাওয়া বাংলাদেশ এবং পৃথিবীকে কিভাবে দেখবেন আপনি
- AbuSayed Mahfuz
- Mar 1
- 6 min read
বদলে যাওয়া বাংলাদেশ এবং পৃথিবীকে কিভাবে দেখবেন আপনি
আবুসাইদ মাহফুজ
(আবুসাইদ মাহফুজ আশির দশক থোকে বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায় লেখালেখি এবং সাংবাদিকতা করেছেন। ১৯৯১ সালে মালয়েশিয়া গমনের পর ১৯৯৫ সালে মালয়েশীয়াস্থ ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে শরীয়া আইনে থিসিসসহ মাস্টার্স শেষ করে যুক্তরাষ্ট গিয়ে কম্পিউটার ইনফরমেশন সিস্টেমে মাস্টার্স করেন। প্রায় ২০ বছর যাবত আই টি প্রফেশনাল হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি পার্ট টাইম লেখালেখি করেন। ২০২২ থেকে ২০১২ পর্য্যন্ত মিশিগান থেকে ”বাংলা আমার” নামে পত্রিকা প্রকাশনা ও সম্পাদনার কাজ করেন, এবং ফ্রি ল্যান্স লেখালেখি করেন। বর্তমান তিনি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অধীনে আই টি সেক্টরে কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করছেন। Email: editorBanglaAmar@gmail.com, www.just9minutes.com , www.techsprit.org)
আমি আজ একটি বইয়ের রেফারেন্স এর মাধ্যমে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা বলবো। বইটির নাম (Managing Transitions ) অর্থাৎ আপনার আমার জীবনে যে সব পরিবর্তন আসে সে পরিবর্তন কিভাবে আপনি ম্যানেজ করবেন বা সামলাবেন?
পরিবর্তন
পরিবর্তন জীবনে অনেক ভাবেই আসে বা আসতে পারে। আপনি সিংগল লাইফ থেকে বিয়ে করে বিবাহিত হয়েছেন সেটা একটা পরিবর্তন, গ্রাম থেকে শহরে এসেছেন সেখানে খাপ খাওয়ানো একটা পরিবর্তন। বাংলাদেশ থেকে বিদেশে গেছেন, কিংবা অনেক বছর বিদেশে কাটিয়ে দেশে গেছেন সেটাও এক ধরণের পরিবর্তন। একান্ত আপনজন কিংবা পরিবারের একমাত্র আয়ক্ষম ব্যক্তির মৃত্যু। এভাবে যে কোন ধরনের পরিবর্তনই কিন্তু চ্যলেঞ্জিং, এবং কঠিন। মানুষের জীবনে বড় ধরনের পরিবর্তনে যে কঠিন সময় আসে সে কঠিন সময় আপনি কিভাবে মোকাবেলা করবেন এই বইতে সেটা আলোচনা করা হয়েছে। তবে আমার আজকের আলোচনার বিষয় সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে বাংলাদেশে যে পরিবর্তন হয়েছে তা কেন কিভাবে হয়েছে এবং অন্যরা কি প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে তাতে আপনার প্রতিক্রিয়া কি হওয়া উচিত বা কিভাবে সেটা মোকাবেলা করবেন।
পৃথিবীর সব ধরনের ট্রাঞ্জিশন বা পরিবর্তনে কিছু সমস্যা পোহাতে হয়। চ্যালেঞ্জ থাকে। আমরা পরীক্ষা দিয়ে এক ক্লাস থেকে আরেক ক্লাসে উঠি, কিন্তু মাঝখানে যে পরীক্ষাটা আমাদেরকে বড্ড পীড়া দেয়। পাশ করার পর আবার কিছু চ্যালেঞ্জ থাকে। নতুন ক্লাস, নতুন বই অনেক সময় আবার অন্য স্কুলে যেতে হয়। কিছু নতুনত্ব থাকে এডজাস্ট করতে হয় অনেক কিছু।
আমার আলোচনার বিষয় বাংলাদেশে যে পরিবর্তন এসেছে সেটা নিয়ে। এই পরিবর্তন আপনি কিভাবে সামলাবেন? তবে আমি কিন্তু শুধুমাত্র গত ৫ই আগষ্ট যে বাংলাদেশে যে পরিবর্তন এসেছে সে পরিবর্তনের কথাই বলছিনা। ৫ আগষ্টের পরিবর্তন একটা বড় ধরনের পরিবর্তনে অংশ এবং গত চল্লিশ বছরে যে পরিবর্তন এসেছে তার বহিঃপ্রকাশ। আজকে সেটা নিয়ে আলোচনা করতে চাই। এমনকি পরিবর্তন শুধু বাংলাদেশেই আসেনি। সারা বিশে^ই বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে, এবং ২০২৪ সালের জুলাই আগস্ট বিপ্লবের পেছনে যে বিশ^ব্যাবস্থায় পরিবর্তনের কোন প্রভাব নাই সেটাও বলা যাবে। বিশেষভাবে আধুনিক প্রযুক্তির কারণে পুরো বিশ^টাই এখন একটা গ্রাম হয়ে গেছে। এই বিশ^ব্যাবস্থার পরিবর্তনের কারনেও। এবং বিশে^ও পরিবর্তনে বাংলাদেশের উপর কিভাবে প্রভাব ফেলেছে বা ফেলছে সেটার উপরও কিঞ্চিত আলোচনা করবো।
বলে রাখা ভাল, যাদের বয়স ৪০ বা ৫০ এর উপরে আমার এ লেখা তারা খুব ভাল বুঝবেন এবং ধরে নিতে পারেন লেখাটা মুলত তাদের জন্যই। ৪০ বা ৫০ বছর আগে আপনি যে বাংলাদেশ দেখেছেন আজকের বিশ^ আর আজকের বাংলাদেশ কিন্তু সেখানে নাই। এই পরিবর্র্তিত বাংলাদেশে এবং বিশে^ কিভাবে নিজকে ম্যনেজ করবেন?
গত ৫ই আগষ্ট বাংলাদেশে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে সেটা হলো গত পঞ্চাশ বছরে তিলে তিলে চলে আসা একটা পরিবর্তনের বহিঃপ্রকাশ। আমাদের জীবনের প্রতিটি বিষয়ই প্রতিটি বস্তুই প্রতিদিন একটু একটু করে পরিবর্তিত হয়। কিন্তু প্রতিদিনকার এই পরিবর্তন আমাদের চোখে পড়ে না। আমরা যখন হঠাৎ পরিবর্তন দেখি সেটাই আমাদের চোখে পড়ে। আপনি সেখানে বাস করেন সেখানে প্রতিদিন তিলে তিলে যে পরিবর্তন হয় সেটা আপনার নজরে পড়ে না। কিন্তু আমি যদি ২০ বা ৩০ বছর পর যেখানে আবার যাই আমার চোখে পরিবর্তন চোখে পড়বে। তেমনি ভাবে যে শিশু ২০ বছর আগে যা দেখেছে সে অসম্ভব স্মরণশক্তি সম্পন্ন না হলে তার চোখে পরিবর্তন দেখা যাবে না।
২০২৪ সালের ৫ই আগষ্টে বাংলাদেশে যে পরিবর্তন হয়েছে সেটা অবশ্যই অনেক বড় ধরনের একটা পরিবর্তন এবং দীর্ঘদিনের ক্ষোভ, ব্যথা এবং পরিবর্তন এর বহিঃপ্রকাশ। আমরা অনেক সময় অনেক চটকদার বা লোমহর্ষক সংবাদ দেখি, ” ১০ টাকা বা ২০ টাকার জন্য বাবা ছেলেকে খুন করেছে, বা ছেলে বাবাকে খুন করেছে বা সামান্য কারণে মানুষ আপন জনকে খুন করে।” এ ধরনের সংবাদ আসলে সঠিক নয়, পৃথিবীতে কোন বাবা বা ছেলে দশ টাকা বা বিশ টাকার জন্য খুন করেনা বা করতে পারে না। বরং এটার পেছনে দীর্ঘদিনের জমে থাকা একটা বড় কারণ থাকে, কোন ক্ষোভ থাকে, একদিন মাত্র দশ টাকার জন্য হঠাৎ সেটার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ২০২৪ এর আন্দোলন এবং স্বৈরশাসক হাসিনা পতন আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছিল শুধুমাত্র কোটা আন্দোলন বা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন। কিন্তু না, এর পেছনে ছিল ১৬ বছরের স্বৈরশাষনের প্রতি মানুষের ঘৃণা এবং ক্ষোভ এর বহিঃপ্রকাশ।
শেখ হাসিনা বা ভারতীয় চক্র অত্যন্ত মজবুত, আটঘাট বেধে শক্তিশালী একটা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল গত ১৬ বছর ধরে। কেউ কল্পনা করেনি ভারত-হাসিনা চক্রের অসম্ভব সেই ত্রাসের রাজত্ব কোনদিন কেউ ভাংগতে পারবে, বা ভাংগবে। নাহ করেনি। আপনি, আমি, যিনি আমার এ লেখা পড়ছেন, যদি চোখ বন্ধ করে নিজকে একটু অতীতে নিয়ে যান, বেশি দুরে নয় ২০২৩, ২০২২, ২০১৫ সে সময় আপনি যা দেখেছেন সে সময় আপনি কল্পনাও করতে পারেন নি কেউ ভারত-হাসিনার এই রাজত্বে কখনো হাত দিতে পারবে।
২০১১ বা ২০১২ এর একটা কথা, বাংলাদেশ থেকে একজন সচেতন এক্টিভিস্ট বা বিশিষ্ট ব্যাক্তি আমেরিকা সফরে এসেছিলেন, আমি সে সময় মিশিগানে থাকতাম, সেখানে এক ঘরোয়া পরিবেশে তাঁর সাথে আমার দেখা। তিনি সেখানে সে সময় বলেছিলেন যে, হাসিনা বাংলাদেশে যা করছে তাতে নিজের কবর নিজে রচনা করে রেখেছেন কিন্তু বাংলাদেশে এমন কোন ব্যাক্তি, দল বা শক্তি নাই যে হাসিনাকে ঠেলে হাসিনার খোঁড়া গর্তে ফেলে দেবে। এভাবে গত ১৫ বছরে আমার সাথে অনেক জ্ঞানী গুনি ব্যাক্তির কথা হয়েছে, যারা অনেকে ভেতরের খবর জানতেন, সেনাবাহিনীর ভেতরের খবর জানতেন, কেউ কেউ সাবেক সেনা কর্মকর্তা ছিলেন, অনেকেই হাসিনা পরিবারের সাথে কিংবা প্রশাসনের সাথে পারিবারিক বা সামাজিকভাবে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। সবারই বক্তব্য প্রায় একরকম ছিল, সেটা হল ভারত বাংলাদেশকে এমনভাবে দখল করে নিয়েছিল যে সেটা থেকে বের হবার উপায় ছিল না।
বাকশাল আর মুজিববাদের মিথ্যার প্রাসাদে ভাঙন
কোন ব্যাক্তি, দল কিংবা জাতি যখন মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত হয়, মিথ্যার উপর দাড়াঁয় তখন সে ব্যাক্তি জাতি কিংবা দল একাই ধ্বংস হয় না তার আশে পাশের সহযোগী এবং অনুসারী সকলকে নিয়েই ধ্বংস হয়। শেখ হাসিনা তার পিতা শেখ মুজিবের যে মিথ্যার রাজত্ব কায়েম করেছিল তার পেছনে ছিল একটা ভুল মতাদর্শ, একটা জঘন্য ভুল দর্শন।
১৯৭১ সাল থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত্য শেখ হাসিনার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান যে জুলুম নির্যাতন আর অন্যায় করেছিল যার কারণেই ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট এ মুজিবের পতন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছিল, আজকের প্রজন্ম যে কাহিনী জানে না কেন ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট অবশ্যম্ভাবী ছিল। এমনকি আমরা যারা ৭৩,৭৪ এবং ৭৫ দেখেছি তারাও অনেকে ভুলে গেছি বা ভুলতে বসেছি, কেমন ছিল সে সময়কার মুজিবের দুঃশাসন। গত সতের বছর নতুন প্রজন্মকে একটা মিথ্যা শিক্ষা দেয়া হয়েছিল, প্রচলন করা হয়েছি মুজিবের মুর্তি পুজার। মুজিবের যত অপকর্ম মুছে দেয়ার চেষ্টা চলেছিল। ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট ছিল সেই মিথ্যা সে অন্যায়ের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ। ১৯৭১-৭৫ এর গার্বেজ আর অর্ধ শতাব্দির জঞ্জাল মিথ্যা প্রতারণা, মিথ্যার সংস্কৃতি, অন্যায়ের সংস্কৃতির দর্শনের প্রাসাদে একটি ভাঙন।
শেখ হাসিনার বাবা শেখ মুজিব এবং হাসিনা নিজে এমন এক মিথ্যা এবং চোরের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। যেখানে শেখ মুজিব নিজেই বলেছেন ”সবাই পায় সোনার খনি আর আমি পেয়েছি চোরের খনি।” যেখানে মুজিবকে বলতে হয়েছে সাড়ে সাত কোটি কম্বল আনলাম আমারটাও তো পেলাম না। কম্বল চোর তো মুজিবের নিজের লোকই ছিলেন। চোরই সব সময় চোরের সাথে উঠা বসা করে। মুজিব এমন এক মিথ্যা অজ্ঞতার উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন যে তিনি নিজে ৩ মিলিয়ন আর ৩ লাখের মাঝে পার্থক্য বুঝেন নি, কখনো যদি বুঝেও থাকেন সেটা সত্য প্রকাশ করার মত জ্ঞান বা সৎসাহস তার ছিলনা। মুজিব এমন এক মিথ্যা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যেখানে ৫৪ বছরেও মুক্তিযোদ্ধাদের কোন তালিকা করতে পারেন নি। নিজেরা মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতা গিয়ে ফুর্তি করেছেন, তারপর মুক্তিযোদ্ধা তালিকা করার সময় ১৯৭১ এর পরে জন্ম নেয়া মুজিববাদ বাকশালী শিশুকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় দিয়েছেন।
মুজিব এমন এক মিথ্যা এবং অন্যায়ের উপর ছিলেন যে তার মৃত্যুর পর তারই দলের সভাপতি বলেছিলেন একজন ফেরআউনের পতন হয়েছে। মুজিব এমন এক মিথ্যা জুলুম আর অন্যায়ের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন যেখানে ১৯৭৪ সালে একদিকে ইতিহাসের জঘন্যতম দুর্ভিক্ষ চলছিল মানুষ খাবার না পেয়ে উচ্ছিষ্ট খেয়েছিল, ডাস্টবিনের পঁচা খাবার খুজছিল, কবি রফিক আজাদ কবিতা লিখেছিলেন ”ভাত দে হারামজাদা”। অপরদিকে মুজিব তাঁর বড় ছেলে, শেখ হাসিনার বড় ভাই শেখ কামালের বিয়ে উপলক্ষ্যে ঢাকায় ইতিহাসের ব্যায়বহুল বিলাসবহুল বিয়ের অনুষ্ঠানে মত্ত ছিল। এসব মিথ্যা, ভুয়া, অসততার কারণে সে সময়কার আওয়ামী লীগেরই সংসদ সদস্য বই লিখেছিলেন ”ঢাকা আগরতলা মুজিবনগর”।
যে কারণে ১৯৭৫ সালে মুজিবকে নিশ্চিহ্ন করার নেতৃত্ব শুধু মেজর ডালিম বা ফারুক রশিদরাই করেনি। সে সময় আওয়ামী লীগই মুজিবের পতনে, মুজিবকে নিশ্চিহ্ন করার নেতৃত্ব দিয়েছিল, মুজিবের ধ্বংশের পর মোশতাকের নেতৃত্বে যে মন্ত্রীসভা হয়েছিল সেখানে প্রায় সকলেই মুজিবের মন্ত্রীসভারই সদস্য ছিলেন। এমনকি আমরা জানি মেজর ডালিম ও কিন্তু মুজিবের কাছের লোক ছিলেন কিন্তু সেদিন সবাই নিরুপায় ছিলেন, বাধ্য হয়েছিলেন।
মুজিব পুজা, মুজিব বন্দনার উপর কুঠারাঘাত
২০২৪ সালের জুলাই আগষ্ট বিপ্লব ছিল মুজিব পুজা আর মুজিব বন্দনার উপর এক প্রচন্ড কুঠারাঘাত। গত সতের বছরে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মুজিব পুজা আর মুজিব বন্দনাকে অন্যায়ভাবে জোরপূর্বক গ্রথিত করা হয়েছিল। হাজার হাজার প্রতিষ্ঠানে নামকরণ করা হয়েছিল মুজিব আর মুজিব পরিবারের নামে। লক্ষ লক্ষ ছবি, মুরাল মূর্তি সারাদেশ, জেলায় জেলায়, শহরে বন্দরে অফিস আদালতে শুধু মুজিবের ছবি, মুজিব পরিবারের ছবি, হাসিনার ছবি। যে দিকেই তাকাবেন শুধু মুজিবের ছবি, মুজিব বন্দনা। এ যেন পুজার চেয়েও বেশী।
শুধু একটি উদাহরণ দেব। ইসলামী বিশ^বিদ্যালয় কুষ্টিয়া, যে প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ইসলামী জ্ঞান বিজ্ঞান প্রসারের জন্য, হবার কথা ছিল ইসলামী শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র, সেই প্রতিষ্ঠানে ক্যাম্পাসে যেখানে মোড়ে মোড়ে শুধু মুজিবের মুরাল, বিশাল আকারের ছবি, হাসিনার ছবি। শেখ রাসেলের ছবি। সেখানে দেখেছি, সচক্ষে দেখেছি ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের মেধাবী স্বর্নপদক প্রাপ্ত কৃতি ছাত্ররা ক্যাম্পাসে যেদিকেই ছবি তুলছে, শুধু মুজিবের ছবি পেছনে। যারা মুজিবের ইতিহাস জানে না, তাদেরকে ভুল ইতিহাস, মিথ্যা ইতিহাস শিক্ষা দেয়া হয়েছিল। ২০২৩ সালে দাওয়াহ ও ইসলামী স্টাডিজ বিভাগের এলোমনাই পূর্নমিলনী, আমি সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানে স্টেজের পেছনে মরা মুজিবের ছ্্ব,ি শেখ রাসেলের ছবি দিয়ে ভরা। দাওয়াহ এন্ড ইসলামী স্টাডিজ বিভাগের অনুষ্ঠান, সেখানে পুরো স্টেজের পেছনে কেন মুজিবের ছবি, রাসেলের ছবি টানানো হয়েছিল সেটা আমার আজো বুঝে আসে না। সেখানে বিশেষ অতিথি হিসেবে এমন ব্যাক্তিদেরকে দাওয়াত দেয়া হয়েছিল যারা কোনদিন ইসলাম চায়নি। ইসলামী বিশ^বিদ্যালয় হোক সেটা চায়নি। যারা সরাসরি ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়কে ধ্বংশ করতে সচেষ্ট ছিল যার চাক্ষুস প্রমাণ আছে।
আমি ইসলামী বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলনে অংশ নিয়েছি। সরাসরি আন্দোলন সংগ্রাম করেছি, সরাসরি রাস্তায় নেমেছিলাম। ৮০ -৯০ দশকের সন্ধিক্ষনে মাদ্রাসা ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব করে ইসলামী বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছি। আমার বাবা জমিয়তুল মোদাররেসীন এর ব্যানারে সে একই আন্দোলনে শরিক ছিলেন। তারপর আমি ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের ছাত্র ছিলাম। ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের ছাত্র হিসাবে অনেক কিছু আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি, আমি নিজে করেছি। নিজ হাতে করেছি। ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের প্রথম দেয়াল পত্রিকা আমার সম্পাদনায় বের হয়েছে। সেখানে আমার সামনে দাওয়া বিভাগের অনুষ্ঠানে এভাবে মুজিব পুজা দেখে যত অপমান বোধ করেছি মনে হয় আমার জীবনে এত অপমানবোধ আর কোনদিন হয়নি। সেদিন আমার মনে হয়েছিল সেটা ছিল আমার গালে একটা চপেটাঘাত। অথচ দেখেছি মেধাবী ছাত্ররা, এমনকি মেধাবী অধ্যাপকরা যারা এক সময় আমার সহপাঠি ছিল তারা সেই একই মুজিব বন্দনায় মত্ত। হ্যাঁ, অনেক ছাত্র, অনেক শিক্ষক যে সেদিন আমার মত আহত হয়েছেন সেটাও লক্ষ্য করেছি এবং দেখেছি। আমাকে অনেকে ফোন করেছেন।
এভাবেই হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ আঘাতের ব্যাথা তুষের আগুনের মত ভেতরে ভেতরে জ¦লছিল এবং ২৪ এর জুলাই আগষ্টে সেটার বহিঃ প্রকাশ ঘটে।
গুম খুন সন্ত্রাস জুলুমের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদ
হাসিনার দুঃশাসনের সময়ই কোন এক টক শোতে সম্ভবত শুনেছিলাম বা কোথাও পড়েছিলাম কে একজন সেসময় আওয়ামী লীগকে বলেছিল, ”আপনি যখন কাউকে আঘাত করেন, পরদিন বা পরের সপ্তাহে তা ভুলে যাবেন, কিন্তু যাকে আঘাত করেছেন সে কোনদিন ভুলবে না।” এভাবেই হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ আঘাতের ব্যাথা তুষের আগুনের মত ভেতরে ভেতরে জ¦লছিল এবং ২৪ এর জুলাই আগষ্টে সেটার বহিঃ প্রকাশ ঘটে। গত ১৬ বছরের গুম খুন, আয়না ঘরের কাহিনী আমরা সবাই জানি। তাই সে বিষয়ে এখানে কোন আলোচনায় যাব না। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগষ্টই ছিল ১৬ বছরের সকল অন্যায়, অবিচার, গুম খুন বিচারিক হত্যার প্রতিবাদ। এই ছিল সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের ভাষা। জালিম জুলুম করে চলে গেছে মনে রাখেনি, ক’জনকে মনে রাখবে। মজলুম কিন্তু ভুলেনি। সেদিন হয়ত প্রতিবাদ করার সাহস ছিল না। কিন্তু ভুলে যায়নি। তাদের ভাই বোন, আত্œীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশী কেউ ভুলেছি পিচাশ হাসিনা এবং তার দোষরদের গুম, খুন সন্ত্রাস আর অন্যায়।
মজ্জাগত মিথ্যুক এবং মানষিক রোগীর বিরুদ্ধে চপেটাঘাত
শেখ হাসিনা এই মিথ্যার রাজত্ব যে সেই সাধারণ মিথ্যা ছিল না। হাসিনা তার বাবা মুজিব এবং তাদের অনুসারীরা ছিল মজ্জাগত মিথ্যুক। যেটাকে ইংরেজীতে বলে প্যাথলজিক্যাল লায়ার এবং মানষিক রোগী। যার কারণে এই মহিলা হেলিকপ্টার দিয়ে গুলি করার পর একমাত্র একজন নির্লজ্জ এবং মানষিক রোগীই প্রকাশ্যে বলতে পারে ”আগুন দাউ দাউ করে জলছিল, আমি হেলিকপ্টার দিয়ে আগুন নেভাতে নির্দেশ দিয়েছি”। এমনিভাবে, কত বড় মজ্জাগত মিথ্যুক হলে পালানোর পুরো প্রস্তুতি নিয়ে রেখে, জোর গলায় বলে ”শেখ হাসিনা পালায় না”। একজন মানুষ কতটা মানষিক অসুস্থ আর অমানুষ হলে, ইলিয়াস আলীকে খুন করে, তারপর ইলিয়াস আলীর স্ত্রী এবং শিশু কন্যাকে ডেকে এনে নাটক করতে পারে!!!?? এভাবে হাজারো ঘটনা হাজারো কাহিনী আমরা জানি সবাই জানে।
একজন মানুষ কত বিকারগ্রস্থ হলে জাতীকে নিয়ে তামাশা করতে পারে। একটি দু’টি নয় শেখ হাসিনার শত শত বক্তব্য পাওয়া যা শুনলে যে কোন স্বাভাবিক চিন্তার মানুষ এই মহিলাকে মানষিক বিকারগ্রস্ত বুঝে নিবে। তিনি একবার বলেন পেয়াজ ছাড়াও রান্না হয়, আমরা বাসায় পেয়াজ ছাড়া রাঁিধ, তারপর বলেন মাংসের পরিবর্তে কাঠাল খাওয়ার, কাঠালের কাবাব এর গল্প, কাঠালের বার্গার করার গল্প, আবার বলবে ডিম সিদ্ধ করে ফ্রিজে রেখে দিবেন, মিস্টি কোমড়া দিয়েও বেগুনী হয়।
মানষিক বিকারগ্রস্থ শুধু হাসিনা ছিলনা, কাউয়া নামের যে একজন ছিলেন, যিনি বলতেন বিখ্যাত ডায়ালগ, ”খেলা হবে”। ”পালাবোনা, পালাবো কোথায় প্রয়োজনে ফখরুল সাহেবের বাড়ী গিয়ে উঠবো”। এখন কই গেলেন কাউয়া কাদের ? কই খেলার মাঠে তো আর দেখা গেল না। পালাবেন না বলেছিলেন শেষ পর্যন্ত্য লেজ গুটিয়ে চোরের মতই পালালেন। একটু ও লজ্জা করেনি!! বিকারগস্ত হাসিনার অধিকাংশ কথাবার্তা ছিল খুব নিন্ম মানষিকতার। তিনি সবসময় খালেদা জিয়াকে নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য কথা বলতেন। তিনি ডঃ ইউনুসকে পদ্মা সেতু থেকে টুপ করে ফেলে দিতে বলেছিলেন।
আসলে এই দলটাই ছিল বিকারগ্রস্থদের। বাটপার সুমন ছিল না একটা? মনে ইতিহাসের সবচে বড় বাটপার ছিল এই শয়তানটা। মানুষ যে কত বদ হতে পারে, বাটপার হতে পারে তা এই শয়তানটার কাজ দেখলে বুঝা যাবে। শয়তান ও লজ্জা পাবে এদের বাটপারির কাছে। তারপর তার সাথে সাংবাদিক নামের কিছু কলংক। সত্যি বলতে কি আমি আমার তারুণ্য আর যেীবনে ১৮-২০ বছর সাংবাদিকতা করেছি। প্রবাসে প্রায় ১০ বছর পত্রিকা প্রকাশ করেছি। আমি বলতে পারেন তারপর সাংবাদিকতা জগতে এই বাটপারি দেখে সাংবাদিকতা পেশার প্রতি ঘৃণা জন্মেছে তারপর ছেড়ে দিয়েছি সাংবাদিকতা। যেখানে সাংবাদিকদের প্রধান কাজ হবার কথা ছিল ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করা, সমালোচনা করা, সেখানে প্রতিনিয়ত দেখেছি সাংবাদিক নামের কিছু অপদার্থ ক্ষমতার পদলেহন করতে তখন রাগে ঘৃণায় গা গির গির করে উঠতো। এই দেশ কি আমরা চেয়েছিলাম?!
কত বলবো, শেখ হাসিনা আর তার বিকারগ্রস্ত সাঙপাঙ দের কর্মকান্ড নিয়ে শত শত বই লেখা যাবে, পি এইচ ডি থিসিস করা যাবে।
মুজিববাদী বাকশালীদের দুঃখ ক্ষোভ আর ভীতি
পৃথিবীর সব ধরনের ট্রাঞ্জিশন বা পরিবর্তনে কিছু সমস্যা পোহাতে হয়। চ্যালেঞ্জ থাকে। আমরা পরীক্ষা দিয়ে এক ক্লাস থেকে আরেক ক্লাসে উঠি, কিন্তু মাঝখানে যে পরীক্ষাটা আমাদেরকে বড্ড পীড়া দেয়। পাশ করার পর আবার কিছু চ্যালেঞ্জ থাকে। নতুন ক্লাস, নতুন বই অনেক সময় আবার অন্য স্কুলে যেতে হয়। কিছু নতুনত্ব থাকে এডজাস্ট করতে হয় অনেক কিছু।
এর পেছনে প্রধানত দুটি কারণ রয়েছে। প্রথম কারণ এই বইতেই বলা আছে। একটা দল, আদর্শ বা ব্যাবস্থা যখন ভেঙে পড়ে, তখন এ প্রেক্ষাপটে পুরাতন ব্যাবস্থার যারা ধারক বাহক বা তল্পীবাহকরা পরির্তণকে কখনই সহজে নিতে পারে না, তারা প্রচন্ড শক খায়, প্রচন্ড ধাক্কা খায়, হতবাক হয়ে যায়, রাগে, দুঃখে, ক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিশ^াস করতে পারে না। ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে, বিষন্নতায় ভোগে।
বাস্কেটবলে তলা কাটা যে বাস্কেট বা ঝুড়ি থাকে, একসময় প্রথমদিকে এই বাস্কেটে তলা ছিল। খেলোয়াড়রা বাস্কেট বলটি বাস্কেটে ফেলতে পারলে একজন রেফারি উঠে সেটা নামিয়ে আনতো তারপর আবার খেলা হতো। চীনে বিখ্যাত ব্যাবসায়ী আলী বাবার কোন একটা আলোচনায় শুনেছিলাম, প্রথম কেউ একজন যখন আইডিয়া দিল যে বাস্কেট বা ঝুড়িটার তলা কেটে দিলে বলটা অটোমেটিক পড়ে যাবে তাতে কেউ কষ্ট করে উঠে বলটা আনতে হবে না, সময় ও নষ্ট হবে না। আলি বাবার ভাষায় কিছু লোক এই প্রস্তাবে বাধা দিয়েছিল, বিশেষ করে যে সব রেফারীর চাকুরীই ছিল এই বল নামানো। আলি বাবা বলতে চেয়েছেন পৃথিবীতে যে কোন নুতন ভাল আইডিয়া, ভাল কাজ ভাল পরিবর্তন কিছু মানুষ বাধা দিবে। কারণ সেটা তাদের চাকুরী তাছাড়া মানুষ পরিবর্তনকে ভয় পায়। শেখ হাসিনা চক্র গত ১৬ বছর যে কোটি কোটি টাকা চুরি করে পেট মোটা করেছে তারা স্বভাবতই এই পরিবর্তন শেখ হাসিনার পতন স্বাভাবিকভাবে নিবেনা। কারণ এতে তাদের চুরি শেষ হলো, পেটের চর্বি শেষ হবে।
একটা গল্প বলি, বাস্তব ঘটনা। আপনারাও অনেকে হয়ত এই ঘটনা দেখেছেন। আমি যখন খুব ছোট তখন এশবার কোরবানী ঈদে কোরবানী দেয়ার জন্য বাজার থেকে খুব তাগড়া বড়সড় এক ষাড় বা বলদ গরু কেনা হয়েছিল। কোরবানীর সময় গরুটির গলায় ছুরি দেয়ার পর যখন প্রায় অর্ধেক কাটা হয়ে গিয়েছিল তখন গরুটি প্রচন্ড একটা ঝাকুনি দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। উপস্থিত সবাই ভয় পেয়ে যায় এবং থতমত খেয়ে যায়। তারপর কিছু সাহসী যুবক দেীড়ে গিয়ে গরুটিকে কব্জা করে। এমনকি আগের দিনে তো গ্রামে মুরগী জবাই হতো তখন অনেক সময় মোরগ জবাই করার সময়ও এটা দেখেছি যে জবাই করার পরও মুরগী বা মোরগটা অর্ধেক কাটা কল্লাটা নিয়া দেীড় দেয় এবং প্রচন্ড লাফায়। ৫ আগষ্টের বিপ্লবের পর হাসিনা এবং তার গুন্ডা পান্ডা লাফ ঝাঁপ আর চিল্লানি মেতানী দেখে আমার বারবার সেই বলদ গরু আর জবাই করা মুরগীর কথা মনে পড়ে।
বাকশাল আর মুজিববাদের পেছনে কারা শক্তি যোগায়
যে বাকশাল শেষ হয়ে গিয়েছিল সেটা আবার কিভাবে এত শক্তিশালি ভিত গড়ে তুলেছিল। শেখ হাসিনার কি এমন শক্তি ছিল যার কারণে মরে যাওয়া, শেষ হয়ে যাওয়া ফ্যাসিবাদ এবং স্বৈরাচারের পুনুরুত্থান ঘটে। কিংবা এত অন্যায় অবিচার জুলুম নির্যাতনের পর এই কুখ্যাত বাকশার ফিরেও আসতে পারে যাদের সহায়তায়। কিভাবে মুজিব এবং হাসিনা এই মিথ্যার শক্তি অর্জন করেছিলেন। কে বা কারা ছিল মুজিব এবং হাসিনার দোসর। ধ্বংসপ্রাপ্ত পচে যাওয়া বাকশাল আর মুজিববাদের পেছনে কারা শক্তি যোগায়?
এ ব্যাপারটা বুঝতে দুটো বিষয় বুঝতে হবে। প্রথম কথা হলো, আওয়ামী লীগ কিন্তু আসলেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল এবং গিয়েছে। আসল আওয়ামী লীগ আর নাই। কথাটা নাটকীয় মনে হলেও একটু গভীরভাবে চিন্তুা করলে এর সত্যতা বুঝা যাবে। আওয়ামী লীগ প্রথম যখন যেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সে আওয়ামী লীগ কি আজ আছে? না, সে আওয়ামী লীগ আর নাই। শেষ হয়ে গিয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মুসলিম লীগের উপর ভিত্তি করে। মুসলিম লীগের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত ১৯৪৯ সালে প্রথম এই সংগঠনটির প্রথম নাম ছিল ”পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ”। তারপর মুসলিম নাম বাদ দিয়ে হয়েছিল হয়ে পড়েছিল আওয়ামী লীগ, যেটা মুলত বামঘেষা, ধর্মহীন দর্শনের উপর ভিত্তি করে। তারপর ১৯৭৪ সালে হয়ে গিয়েছিল বাকশাল। (বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ), এবং আমরা সবাই জানি এই বাকশাল ছিল বামদের সমন্বয়ে আওয়ামী লীগ। সুতরাং এটা স্পষ্ট, আওয়ামী লীগ বলতে দলটি বিলিন হয়ে গিয়েছিল। আওয়ামী লীগ ধ্বংশপ্রাপ্ত হারিয়ে যাওয়া দল।
দ্বিতীয়ত তারপর সেই মরা আওয়ামী লীগের উপর সওয়ার হয়েছে মুলত ৩টি বিদেশী শক্তি। ভারতীয় আধিপত্যবাদ, বামপন্থী ভুত বা নিউ মার্কিসজম নামে আরেক বিষাক্ত মতবাদ। ভারতীয় আধিপত্যবাদ এবং পশ্চিমা আধিপত্যবাদ এটা তাদের জিও পলিটিক্স। সোজা বাংলায় বলতে গেলে বাংলাদেশে তাদের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রন দরকার। ভারতীয় আধিপত্যবাদের সাথে এখন কট্রর হিন্দুত্ববাদী মতবাদ যোগ হয়েছে। আর রয়েছে পচে যাওয়া মার্কসবাদী বামপন্থী এই তিন ভুত মরা আওয়ামী লীগের বাংলাদেশে তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে রসদ যোগায়, অতীতে যুগিয়েছে এবং এখনো জারি রেখেছে।
টার্গেট ইসলামোফোবিয়া
ভারতীয় আধিপত্যবাদ, বামপন্থী মার্কসবাদ আর ক্ল্যাশ অফ সিভিলাইজেশন এদের সবার টার্গেট ইসলাম এবং ইসলামোফোবিয়া ছড়ানো। ইসলামের বিরুদ্ধে বিষোধগার করা, ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো।
আমরা জানি আমাদের আশে পাশের কিছু আওয়ামী লীগ আছে যারা ধর্ম পালন করে। এরা হয়ত গর্ধভ অথবা মোনাফেক। আমরা শুনেছি শেখ প্রতিরাতে ১০০ রাকাত তাহাজ্জুদ পড়তেন। শামিম ওসমান তো মনে হয় শুনেছি ১০০০ রাকাত তাহাজ্জুদ পড়তেন। তাদের এ তাহাজ্জুদ হয়তোবা মারেফতি। শুয়ে শুয়ে ঘুমের ঘোরে তাহাজ্জুদ। সে যাক ধর্মপ্রাণ আওয়ামী লীগারদের কেন গর্ধভ অথবা মোনাফেক বললাম। এটা হলো এক ধরনের গাছের গোড়া কেটে আগায় পানি দেওয়া। বা লুঙি খুলে পাগড়ি বাঁধার মত। যে দল বা গোষ্ঠির মুল লক্ষ্যই হলো ইসলামের জড় কেটে দেয়া তাদের পেছনে লম্প ঝম্প দিয়ে বক ধর্ম পালন করা অনর্থক।
মার্কসবাদ এবং ক্ল্যাশ অফ সিভিলাইজেশ
ভারতীয় আধিপত্যবাদ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবি আবরণে কিছু ভারতীয় তল্পীবাহী সৃষ্টি করে। যাদের মন মগজে ভারত প্রেম, ভারত পুজা ইসলামের প্রতি একটা শংকা বা ঘৃণা তৈরি করা। গত ১৫ বছরে বা তারও বেশী সময় ধরে বাংলাদেশে এত বেশী ভারত পুজারী সৃষ্টি করা হয়েছিল যে যারা চোখে ভারত ছাড়া আর কিছু দেখেনা। নাটকে সিনেমায়, ইউ টিউবে সোশ্যাল মিডিয়াতে সংস্কৃতি জগতে ইসলামের প্রতি এক ধরণে ঘৃণা সৃষ্টিই ছিল এদের টার্গেট। নাটক সিনেমায় দাড়ি টুপি আর হিজাবের বিরুদ্ধে প্রচারণা। শুধু কি তাই। ইসলামকে বিতর্কিত করার জন্য ভারতীয় আধিপত্যবাদের প্রচ্ছন্ন মদদে ইসলামের বিভিন্ন পর্যায়ে দ্বন্ধ সংঘাত সৃষ্টি করা হয়। তাদের প্রথম টার্গেট ছিল জামাত। কথায় কথায় যাকে তাকে জামাত ট্যাগ লাগানো। তারপর দ্বন্ধ সৃষ্টি করা হয় তাবলীগ জামাতের মধ্যে, যে তাবলীগ জামাত সারা জীবন নিরীহ অসহায় সাধারণ মানুষের ছিল সেখানেও শেষ পর্যন্ত্য মারামারি খুনাখুনির পর্যায়ে পেীছে। যার পেছনে ছিল প্রচ্ছন্নভাবে ভারতীয় আধিপত্যবাদের মদদ। শুধু কি তাই ইসলামকে বিতর্কিত করার জন্য সৃষ্টি করা হয়, হাদীস অস্বীকারকারী বিভিন্ন ইউ টিউব বক্তা। এমনকি প্রচ্ছন্নভাবে প্রচার চলতে থাকে যে ইসলাম হলো অনেক পরের ধর্ম। সনাতণি হিন্দু ধর্ম হলো পুরাণতম ধর্ম বাংলাদেশের আদি ধর্ম। এমন প্রচারণা আমরা যেমন কোন কোন ইউ টিউব বক্তার কাছে শুনেছি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা এমন বক্তব্য শুনেছি সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকারের এক বক্তব্যে।
ইসলাম অনেক পরের ধর্ম যারা বলেন তাদের জন্য আমার একটা উত্তর আছে। সেটা হলো, যারা ইসলামে বিশ^াস করেন তারা কখনো ইসলামকে মোহামেডান মনে করে না বা বিশ^াস করে না। অর্থাৎ যদিও ওরিয়েন্টালিস্টরা তাদের লেখায় ইসলামকে মোহামেডান নামে আখ্যায়িত করেছে কিন্তু ইসলামের ইতিহাসে কেউ ইসলামকে মোহামেডান মনে করে না। যার অর্থ হলো, কোন মুসলমান মনে করে না বা বিশ^াস করে না যে ইসলাম মুহম্মদ সাঃ এর আবিস্কৃত কোন নতুন ধর্ম। বরং মুসলমানদের বিশ^াস হলো ইসলাম হলো আল্লাহর মনোনীত জীবন ব্যাবস্থা যেটা পৃথিবী সৃষ্টির প্রথম থেকে প্রথম মানুষ আদম আঃ থেকে শুরু। একজন মুসলমান সকল নবীর উপর, সকল কিতাবের উপর বিশ^াস রাখে। যীশু খ্রীস্ট ঈসা আঃ কিংবা মোজেস বা মুসা আঃ এর বিশ^াস না করে কোন মুসলমান মুসলমান হয় না। শুধু তাই নয় মুসলমানরা বিশ^াস করে আল্লাহ পাক যুগে যুগে মানব জাতির হেদায়েতের জন্য এক লাখ বা দুই লাক চব্বিশ হাজার পয়গম্বর পাঠিয়েছেন। সুতরাং ইসলাম আল্লাহর প্রেরীত কোন পয়গম্বরকেই অস্বীকার করে না। কে আগে এসেছে বা কে পরে এসেছে সেটা ইসলামের দৃষ্টিতে আলোচ্য বিষয় নয়।
তবে এখানে আমার একটি ব্যাক্তিগত যুক্তি আছে। আমরা জানি যুগে যুগে যেখানে রাজতন্ত্র আছে সেখানে রাজার ছেলেরা রাজার উত্তরসূরী হয়। এ ক্ষেত্রে রাজার মৃত্যুর পর বড় ছেলেই প্রথম উল্টরসূরী হয়। কিন্তু কোন রাজার বড় ছেলে যদি অযোগ্য অপদার্থ কিংবা অসৎ চরিত্রের হয় কিংবা কোন কারণে বড় ছেলে যদি রাজত্ব গ্রহনে অযোগ্য হয় তখন ২য়, ৩য় বা ৪র্থ ছেলেই রাজত্ব গ্রহন করে। ইসলামের বিশ^াসে সকল নবীকে স্বীকার করা হয়। কিন্তু সমস্যা হলো তারা কেউই আল্লাহর প্রেরিত যে গাইডলাইন বা কিতাব দেয়া হয়েছিল সেটা অক্ষুন্ন রাখেনি।
মার্কিস্টদের রং বদল এবং শাড়ির আচঁলে আশ্রয়
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হলে মার্কিস্টরা এদিক সেদিক ছুটাছুটি করতে শুরু করে। কেউ এতদিন যে বুর্জুয়াদের বিরুদ্ধে, শ্রেণী সংগ্রামকে উস্কে দিয়ে সন্ত্রাস চালিয়ে এসেছিল এখন তারাই নিজেরা বড় বড় বুর্জুয়া এবং পুজিঁবাদী হয়ে উঠেন।
যদি আমরা ফ্যাসিস্ট হাসিনার দলের দিকে তাকাই তাহলে আমরা দেখবো, বাংলাদেশের এক সময়কার ডাকসাইটে বামরাই আওয়ামী লীগে যোগদান করেছে, কারা হাসিনার দলের নেতৃত্ব দিয়েছে। একে একে প্রায় সকলেই পতিত মার্কসবাদের প্রডাক্ট। মতিয়া চেীধুরী, রাজ্জাক, তোফায়েল, সাজেদা চেীধুরী কে নয়? তার সাথে যোগ দিয়েছেন ইনু মেননদের মত নাস্তিকরা।
একে একে আমরা যদি ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসরদের জীবনী লক্ষ্য করি আমরা দেখবো প্রায় সবগুলোই ছাত্র জীবনে পতিত মার্কসবাদের দোসর।
এখানে আরেকটা বিষয় বলা দরকার। আজকের আলোচনায় মার্কসবাদ নিয়ে আলোচনার বিষয় নয়, বা মার্কসবাদের সমালোচনাও নয়। এজন্য আজকের এই আলোচনা দিয়ে মার্কসবাদকে মূল্যায়ন করা আমার উদ্দেশ্যও নয় বা এটা করা ঠিক হবে বলে আমি মনে করি না। এর প্রথম কারণ হলো মার্কসবাদ সম্পর্কে যদিও আমি যৎসামান্য লেখাপড়া করেছি তবু আমার এ সামান্য জ্ঞান দিয়ে মার্কসবাদের সমালোচনা করা ন্যায় হবে বলে মনে করি না। দ্বিতীয়তঃ আমরা জানি, বিশে^ অনেক সাম্যবাদী মানুষ আছেন যারা কোন না কোনভাবে কোন কোন ক্ষেত্রে মার্কসবাদী চেতনায় সম্পৃক্ত ছিলেন। যেমন বাংলাদেশে কবি ফরহাদ মাজহার এবং সবার পরিচিত পিনাকী ভট্রাচার্য। পিনাকী দাদা মার্কসবাদের শিক্ষায়ই গড়ে উঠেছেন। তেমনিভাবে কবি এবং লেখক ফরহাদ মাজহার বা ডঃ সলিমুল্লাহ খান সহ অনেককে পাব যারা মার্কসবাদী শিক্ষিত হয়েও ইতিহাসে ইতিবাচক ভুমিকা রেখেছেন এবং রাখছেন। মেজর এম এ জলিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে মুক্তিযুদ্ধে ৯ নং সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন, যিনি মার্কসবাদী জাসদের সভাপতি ছিলেন তারপর মার্কসবাদ ত্যাগ করে ইসলামী ঐক্য আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। ব্যাক্তিগতভাবে আমি নিজে মাদ্রাসা পড়াকালীন মার্কসবাদের অনেক বই পড়েছি। মাদ্রাসায় তাফসীরে জালালাইন এর ক্লাসে ফাঁকি দিয়ে ডায়ালেকটিক মেটেরিয়ালিজম এর বাংলা অনুবাদ দ্বান্ধিক বস্তুবাদ বইটি পড়ার সময় ওস্তাদের হাতে ধরা খেয়ে শাস্তি পেয়েছিলাম। সুতরাং আমার আজকের আলোচনার বিষয় মার্কসবাদ নয়। আমার আলোচনার বিষয় যে সব মার্কসবাদীরা হাসিনার ফ্যাসিবাদের দোসর ছিলেন। যাদের সহায়তায়, যাদের উপর ভিত্তি করে হাসিনার এই ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তাদের বিষয়ে।
দূর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশের ইন্টেলেকচুয়াল ভিত্তি তৈরি হয়েছিল এই ভুল দর্শনের উপর ভিত্তি করে। গত অর্ধ শতাব্দি ধরে বাংলাদেশে যারা বুদ্ধিজীবি সেজেছেন, যারা বিশ^বিদ্যালয় পরিচালনা করেছেন, যারা অধ্যাপনা করেছন। মার্কসবাদ, সাম্যবাদ, বামপন্থী এটাকে যে নামেই ডাকি না কেন, এরাই গত অর্ধ শতাব্দিতে বাংলাদেশে সর্বনাশের ভিত্তি করেছেন। এরাই সংবিধান রচনা করেছেন, সংবিধান ব্যখ্যা করেছেন, আবার দু তিন বছর না যেতেই আবার বারবার সে সংবিধানকে পরিবর্তন করেছেন, কাটাছেঁড়া করেছেন। এরা এই ভুল দর্শনের উপরেই প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। আমরা আজ ৫৪ বছর পর বিতর্ক শুনি, মুজিব কি আসলেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা চেয়েছিলেন? এর পেছনেও কিন্তু এই সুক্ষè কারণ বিদ্যমান। মুজিব আসলেই কি স্বাধীনতা চেয়েছিলেন কিনা এটা যেমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, অপরদিকে এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না সে সময় মুজিবের সাথে মার্কসবাদী এবং মাওবাদীদের একটা ক্ষীণ দ্বন্ধ ছিল। আমরা যা জানি, মুজিব নিজে যেহেতু প্রকাশ্য মার্কসবাদী ছিলেন না সে জন্য আদর্শিক বিষয়গুলো মুজিবের কাছে তেমন মূখ্য ছিলনা। মুজিব শুধু তার ক্ষমতা চেয়েছিলেন, তবে এটাও মানতে হবে যে মুজিবের উপর মার্কসবাদের প্রভাব ছিল। তাছাড়া তিনি যেহেতু বাকশাল কায়েম করেছিলেন, সেহেতু তার উপর মার্কসবাদের কোন প্রভাব ছিলনা সেটা দাবী করা অসম্ভব। কারণ বাকশাল কিন্তু মার্কসবাদেরই অন্য রুপ বা নিউ মার্কসিজম। তাছাড়া মুজিবের আশে পাশে যারা ছিলেন তাদের একটা বিরাট অংশ ছিলেন বামপন্থী বা মার্কসবাদী। ৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পর মার্কসবাদীরা তাদের প্রত্যাশিত মার্কসবাদ দেখতে না পেয়ে হতাশ হয়েই জাসদ বাসদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরবর্তীতে এই মার্কসবাদীরা কিংবা আধা মার্কসবাদী কিংবা সেমি মার্কসবাদীরা বিভিন্ন সময় কখনো বাকশালে সওয়ার হন, কখনো আওয়ামী লীগে সওয়ার হন। কখনো আবার বি এন পি তে সওয়ার হন।
বাঙু সেক্যুলার এবং বামপন্থী ফ্যসিবাদের সুতিকাগার
বাংলাদেশের বাঙু সেক্যুলার আর বামপন্থী ফ্যাসিবাদের রোগ এবং সমস্যা ভালভাবে বুঝতে হলে আরেকটু পেছনে যেতে হবে, এবং কিছুটা বিশ^ অংগনের দিকে নজর দিতে হবে। আজকে আমরা যে রাশিয়া দেখছি ১৯৯২ সালের আগে আরো অনেকগুলো দেশ মিলে এর নাম ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। ১৯৯১ সালের ২৬ ডিসেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে টুকরো হয়ে যায় এবং মূল অংশ বা খন্ডাংশের নাম হয় রাশিয়া। এই সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯১৭ সালে তদানিন্তন সোভিয়েত রাশিয়ায় বলশেভিক বিপ্লবের পর ১৯২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়ন। এই সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার পেছনে যদিও বিশ^ রাজনীতির অনেকগুলো দিক ছিল, কিন্তু তাত্বিক বা আদর্শিক ভিত্তি ছিল মার্কসিজম বা কার্ল মার্কস এর মতবাদ প্রতিষ্ঠা। মার্কসবাদের মুল দর্শন শ্রেণী সংগ্রাম এবং অর্থনীতি হলেও একটা বিশেষ দর্শন হল ধর্মহীনতা এবং নাস্তিকতা। মার্কসিজমের ভাষায় ধর্ম হলো আফিম। অর্থাৎ বাংলাদেশের ভাষায় ইয়াবা বা অন্য ড্রাগ গুলোর মত সেগুলো গ্রহন করলে মানুষের হীতাহীত জ্ঞান থাকে না। সোজা কথায় বলতে গেলে মার্কসিজম হলো কট্রর ধর্ম বিরোধী। যদিও কোন কোন মার্কসবাদী যাদের ব্যাক্তিগত জীবনে বা পারিবারিক জীবনে ধর্মের প্রভাব ছিল তারা একটু ভিন্ন ব্যখ্যা দিয়ে বলেন যে, মার্কসবাদ ধর্মবিরোধী নয়। কেউ কেউ আবার রাজনৈতিক কারণে অর্থাৎ যে সব দেশে বা সমাজের মানুষ ধর্মভীরু সে সব সমাজে ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বললে পিঠের চামড়া থাকবে না তাই তারা বিভিন্ন ব্যখ্যার আশ্রয় নেয়।
মার্কসিজম বা মার্কসবাদীরা যদিও দাবী করে আদলে তারা দর্শনগতভাবে সকল ধর্মেরই বিরোধী, কিন্তু ঐতিহাসিক সত্য হলো মার্কসবাদ সবচেয়ে বেশী আঘাত করেছে, ক্ষতি করেছে ইসলাম ধর্মের। বিভিন্ন সময় বাম বা নাস্তিকদের বিভিন্ন কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে এটাই প্রমানিত হয়। গত কয়েক বছরে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত আল জাজিরার সাংবাদিক মেহদী হাসানের সাথে বর্তমান বিশে^র সবচে বড় এবং বিখ্যাত নাস্তিক রিচার্ড ডওকিন্স এর কয়েকটি সাক্ষাতকারে যেটা স্পষ্ট হয়েছে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার সময় লক্ষ লক্ষ মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার আগে সোভিয়েত অধিকৃত অনেকগুলো দেশ ছিল মুসলমানদের জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চার তীর্থ ভূমির মত। রাসুল সাঃ এবং খোলাফায়ে রাশেদার পর যে সব দেশে ইসলামের জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চা হয়েছিল সোভিয়েত অধিকৃত কয়েকটি রাজ্য ছিল তার মধ্যে অন্যতম। পবিত্র কোরআনের পরপরই প্রতিটি মুসলমানে কাছে পবিত্র গ্রন্থ হলো বোখারী শরীফ এবং সিহাহ সিত্তার হাদীস গ্রন্থগুলো। বোখারী শরীফের নামকরন হয়েছে ইমাম বোখারী রহঃ এর নাম থেকে আর ইমাম বোখারীর মূল নাম কিন্তু বোখারী নয়, তাঁর বোখারী নাম এসেছে তিনি যে শহরে জন্ম নিয়েছেন সেই বোখারা শহর থেকে। এই বোখারা শহর নামটি আজ ও বিদ্যমান আছে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ের দখলকৃত দেশ উজবেকিস্তানে। শুধু ইমাম বোখারীই নয়, সিহাহ সিততার আরেকটি বিখ্যাত হাদিস গ্রন্থ হলো তিরমিজি শরীফ। এই তিরমিজি শরীফের নামের ক্ষেত্রেও একই ইতিহাস জড়িত। ইমাম তিরমিজি রহঃ জন্ম উজবেকিস্তানের তিরমিজ শহরের। যে শহর আজো আছে। এমনকি আজো বোখারা, সমরকন্দ এবং তিরমিজ শহরে অনেক প্রবীন জীর্ন শীর্ণ মাদ্রাসা এবং মসজিদ রয়েছে।
আরো সহজ করে বললে বলতে পারি আপনি যদি গুগুল ম্যাপে যান দেখবেন এই শহরটি আফগানিস্তানের কাবুল শহর থেকে মাত্র ৩০০ মাইল বা ৪৫০ কিলোমিটার, আর মাজার ই শরীফ থেকে মাত্র ৬০-৬৫ মাইল। মাজার ই শরীফ থেকে বোখারা শহর গুগুল ম্যাপ অনুযায়ী ৫৩৫ কিলোমিটার।
শুধু উজবেকিস্তানই নয়, আপনি যদি গুগুলো সোভিয়েত ইউনিয়ন বা রাশিয়ার ম্যাপ দেখেন আপনি অনেকগুলো মুসলিম দেশ দেখবেন যেমন কাজাখাস্তান, কিরগিস্তান, তুর্কিমিনিস্তান, তাজিকিস্তান, আজারবাইজান। এই সবগুলোই কিন্তু মুসলিম দেশ এবং এসব মুসলিম দেশেই কিন্তু ইমাম বোখারী, ইমাম তিরমিজির মত ইসলামের পন্ডিতগন জন্মগ্রহন করেছিলেন। এমনকি শুধু ক্লাসিক্যাল ইমামরাই নন, মেডিকেল জগতের কিংবদন্তি ইবনে সীনাও জন্ম গ্রহন করেছিলেন সাবেক সোভিয়েত দেশ উজবেকিস্তানে।
সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক রাশিয়া লক্ষ লক্ষ মুসলমান হত্যা করেছে। আপনারা অনেকে হয়তো আমেরিকার বিখ্যাত নায়িকা আইরিনা শেখ এর কথা শুনেছেন? এই আইরিনা শেখ এর পুরো নাম হলো আইরিনা শায়খুল ইসলাম-ওভা। মুসলিম ঐতিহ্যবাহী মুসলিম শায়খুল ইসলাম পরিবারের সন্তান হলেন আমেরিকার চিত্রনায়িকা আইরিনা শেখ। এই আইরিনা শেখের জন্মও কিন্তু এই উজবেকিস্তানে।
১৯১৭ সালে মার্কসবাদ মুসলিম দেশগুলো সোভিয়েত ইউনিয়নের দখল নিয়ে, লক্ষ লক্ষ মুসলমানকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি। সোভিয়েত ইউনিয়নের অর্থে বিশে^র বিভিন্ন দেশে মার্কসবাদের আদর্শ প্রচার করতে থাকে। আজকে যেমন আমেরিকান ডলার আর সেীদি রিয়াল দিয়ে বিভিন্নভাবে তাদের আদর্শ প্রচার করছে, ১৯৪০- থেকে প্রায় ৭০ এবং ৮০র দশক পর্যন্ত্য সোভিয়েত অর্থে কিছু তথাকথিত বুদ্ধিজীবি তৈরি করা হয়েছিল। বাংলাদেশে ১৯৫০,৬০ এবং ৭০ এর দশকে যারা কলেজ বিশ^বিদ্যালয় এমনকি মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন তাদের একটি বিশাল অংশের কেহই মার্কসাবদী সোভিয়েত ইউনিয়নে এই ছোবল থেকে রেহাই পায়নি। বিশেষ করে মেধাবী ছাত্রগুলো। অনেক সময় ইসলামী পরিবারের মেধাবী ছাত্র ছাত্রীগুলোকে প্রধান টার্গেট করা হয়েছিল। সে সময় মাদ্রাসায় পড়া অনেকেই কমিউনিস্ট হয়েছিলেন। অনেক মাদ্রাসা পড়–য়া, ইসলামী লেখকের সন্তানরা নাস্তিক হয়ে গিয়েছিলেন। বিখ্যাত নাস্তিক বদরুদ্দিন ওমরের পিতা ছিলেন আবুল হাশেম সাহেব যিনি মুলত বাংলাদেশে ইসলামী ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি কমরেড সাইফুদ্দিন আহমদ মানিকের পিতা ছিলেন মেীলভী সিদ্দিক আহমদ। এভাবে ষাটের দশক থেকে আশির দশক পর্যন্ত্য যে সব তরুন যুবক প্রগতিশীল চিন্তা করতেন সবগুলোর মাথা নষ্ট করে দিয়েছিল এই মার্কসবাদী সোভিয়েত বিষবাষ্প। প্রথম আলোর মতিউর রহমান, ডেইলি স্টার এর মাহফুজ আনাম, সাংবাদিক নুরুল কবির, চ্যানেল আই এর জিললুর সহ হাজার হাজার তথাকথিত এলিট এবং বুদ্ধিজীবিরা এই পচে যাওয়া মার্কসবাদের ফসল। আপনি যদি খুব সাধারণভাবে চোখ ফেলেন যে সব নেতা বা বুদ্ধিজীবির বয়স ৫০ বা ষাটের বেশী এদের একটা বিরাট অংশই মার্কসবাদী বা বামপন্থী। বাংলাদেশে মার্কসবাদের প্রচারণার একটা অংশ ছিল ঢাকায় সে সময় উদয়ন নামের একটা ম্যাগাজিন প্রকাশিত হতো যেটা ফ্রি বিতরণ করা হতো। এছাড়াও মার্কসবাদ লেলিনবাদের উপর অজস্ত্র সাহিত্য বাংলায় অনুবাদ করে প্রচার করা হতো। প্রচুর ছাত্রকে স্কলারশীপ দিয়ে রাশিয়া নিয়ে গিয়ে সুন্দরী সুন্দরী রমনী দিয়ে মগজ ধোলাই করা হতো। তারপর তারা বাংলাদেশে এসে বুদ্ধিজীবি সাজতো। আজকের বাংলাদেশের বুদ্ধিভিত্তিক স্তম্ভ (ইনটেলেকচুয়াল পিলার) এর একটি বিরাট অংশ এ সবের উপরই প্রতিষ্ঠিত। মার্কসবাদের মুল সুতিকার যদিও ছাত্র ইউনিয়ন কিন্তু ছাত্র ইউনিয়নকে এদের মুল ভিত্তিমূল মার্কসবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত করিয়ে দিয়ে তারপর অন্যদিকে সাপ্লাই দেয়া হতো। এখানে একটা সমাজতাত্বিক বিষয় হলো একজন মানুষের ছেলেবেলা যে শিক্ষার উপর প্রতিষ্ঠিত হয় তিনি সারা জীবন সে শিক্ষার উপরই প্রতিষ্ঠিত থাকেন।
শুধু বাংলাদেশেই নয় ষাটের দশক থেকে আশির দশক পর্যন্ত্য সোভিয়েত অর্থে লালিত মার্কবাদের সেই বিষাক্ত ছোবল লেগেছিল সারা বিশে^র অনেক দেশেই। আমরা যদি আফগানিস্তানের দিকে তাকাই মোটা দাগে বলা যায় এই মার্কসবাদি বিষাক্ত দর্শনই সবকিছু তছনছ করে দিয়েছিল। আফগানিস্তানের হাফিজ আমিন, বারবাক কারমাল সহ সমসাময়িক অনেক নেতাই মার্কসবাদের প্রডাক্ট।
যে সাম্যবাদ আর অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য মার্কসাবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেই সাম্যবাদেই মার্কসবাদীদের চরম অবক্ষয় নেমে আসে। বুর্জয়াদের বিরুদ্ধে শ্রেণীসংগ্রাম করে সংগ্রামী সাম্যবাদী মার্কসবাদী নেতাদের অনেকে নিজেরাই বুর্জুয়া হয়ে পড়েন।
দিবালোক সিংহ, এম এম আকাশ, রুহিন্স প্রিন্স এরা সরাসরি স্বৈরাচারের দোশর ছিল প্রকাশ্যে আওয়ামী দালালী করেছে, খুন গুম হত্যা সরাসরি সমর্থন করেছে উস্কানী দিয়েছে। জানা গেছে এই নাস্তিক দালালগুলো এবং নেতার এখনো হাসিনার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে এবং ফোনে কথা বলে
পশ্চিমা আধিপত্য ক্ল্যাশ অফ সিভিলাইজেশন
কালের পরম্পরায় মার্কসবাদ ভুল প্রমানিত হয়। ১৯৯১ সালে মার্কসবাদের আপাত পতন হয়। বলা বাহুল্য সোভিয়েত ইউনিয়ন এর পতনের পেছনে আমেরিকার বিশেষ ভুমিকা ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত পতনের আগে সারা বিশে^ দুটো পরাশক্তি ছিল আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত পতনের পর। আমেরিকা একাই বিশে^র রাজা হয়ে উঠে। তাই ১৯৯১ সালে মার্কসবাদের পতনের পর আমেরিকা এবং পাশ্চাত্য নতুন শক্রু খুঁজতে থাকে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর পরই সামুয়েল হান্টিংটন নামে আমেরিকার এক রাজনীতি বিজ্ঞানী অধ্যাপক ক্ল্যাশ অফ সিভিলাইজেশন (বা সভ্যতার দ্বন্ধ) নামে একটি বই লেখেন। যে বইতে তিনি মোটা দাগে ইসলাম এবং ইসলামী সভ্যতাকে পাশ্চাত্যের শক্রু এবং পাশ্চাত্যের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেন। আমেরিকার ইরাক আফগানিস্তান এবং মধ্যপ্রাচ্য নীতি হান্টিনটং এই ভুল দর্শনের কারণেই হয়েছিল। আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট এবং বিরাট সংখ্যক রিপাবলিকান রাজনীতিবিদ হান্টিনটং এর এই দর্শনে বিশ^াসী।
২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট বাংলাদেশের অর্ধ শতাব্দির এই জঞ্জালের পরিবর্তনের আংশিক বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। নতুন ট্রাঞ্জিশন এসেছে। এর প্রথম কারণ হলো ২০২৪ সালের বিপ্লবে যারা নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের মেধা এবং মনন এই মিথ্যার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
বাংলদেশে গত অর্ধ শতাব্দিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। শুধু বাংলাদেশে নয় পরিবর্তন এসেছে পুরো বিশে^। ১৯৯৪ আমি যখন মালয়েশীয়া ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র তখন একটা আর্টিকেল লিখেছিলাম বাংলাদেশ এবং মালয়েশীয়ার তুলনামুলক জীবন পদ্ধতি নিয়ে। আমার সে আর্টিকেল সে সময় প্রকাশিত পাক্ষিক পালাবদল নামে এক ম্যাগাজিনে ছাপা হয়েছিল। সে সময় বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল ১২ কোটি এবং ৮৭% মুসলমানের সংখ্যা ১০ কোটির মত, আর মালয়েশীয়া জনসংখ্যা ছিল দুই কোটির কম ৫৫% ভাগ মুসলমান অর্থাৎ প্রায় এক কোটি মুসলমান। সে আর্টিকেলে লিখেছিলাম, শতকরা ৫৫% এক কোটি মুসলমানের দেশে কুয়ালালামপুরের যে কোন রাস্তায় চোখ ফেললে বা স্যাম্পল ছবি তুললে যতজন হিজাব পরা নারি দেখা যাবে, শতকরা ৫৫% এর এক কোটি মুসলমানের দেশে গুলিস্তান বা ফার্মগেট মগবাজার এর সে সময়কার ব্যস্ততম স্থানে রাস্তায় চোখ ফেললে বা ছবি তুললে হিজাব পরা নারি খুঁেজ পাওয়া যাবে না। হ্যাঁ, আজকের তরুন যুবকদের কাছে কথাটা হয়ত আশ্চর্যজনক মনে হবে। ৭০, ৮০ বা নববুই এর দশকে কলেজ বিশ^বিদ্যালয়ে কিংবা টিভি মিডিয়াতে কোন হিজাবী নারী আমরা কেউ কখনো দেখিনি। শুধু তাই নয়, আমরা জানি দাড়ি রাখা সুন্নত। সে সময় দাড়ি রাখাটা অনেকটা ব্যাক ডেটেড মনে করা হতো। সাধারণত দাড়িওয়ালা ছেলেরা মেয়েদের আকর্ষণ ছিল না। আজকের যুগে তো দাড়ি এবং হিজাব একটা ফ্যাশন হয়ে দাড়িয়েছে। আমি কিন্তু ফ্যাশন শব্দটা নেতিবাচক অর্থে ব্যাবহার করছি না বা ধর্মীয় দৃষ্টিতে বলছি না। একটা সমাজে সেটাই ফ্যাশন হিসেবে গৃহীত হয় যেটা সবাই পছন্দ করে। বাংলাদেশের সভ্যতা সংস্কৃতিতে এটা একটা বিরাট পরিবর্তন।
পরিবর্তন বিশ^ময়ঃ সত্য সমাগত মিথ্যা অপসৃত
২০২৪ এর জুলাই আগস্ট এ কি এমন ছিল যাতে এত বড় একটা প্রাচীর ভেংগে গেল? আজকের আলোচনায় আমি সে কথাই বলবো। অর্থাৎ বাংলাদেশে যে এত বড় একটা পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশের এই পরিবর্তনটা অবশ্যই অনেক বড় একটা পরিবর্তন। এটা কিন্তু শুধুমাত্র ১৭ বছরের স্বৈরশাষনের পতন বা পরিবর্তন নয় বরং বলা যায় গত অর্ধ শতাব্দি বা তার চেয়ে বেশী সময় ধরে প্রগতিশীলতার নামে, আধুনিকতার নামে যে মিথ্যা প্রাসাধ গড়ে উছেছিল, বিশ^পরিবর্তনের কারণে সেই মিথ্যার প্রাসাদে ভাঙন ধরেছে। অসত্য মিথ্যার সে প্রাসাদ ধ্বংস হয়নি। হাসিনার পতন হয়েছে, মিথ্যার সেই প্রাসাদে হাসিনার রাজত্ব ছিল একটি ইট মাত্র। সেই ইট টি ধ্বসে পড়েছে, সাথে আরো অনেকগুলো ইট ধ্বসেছে । কিন্তু সেই প্রাসাদ এখনো পুরোপুরি ধ্বংশ হয়নি বা ধ্বসে পড়েনি। অর্ধ শতাব্দির এক ধরণের জঞ্জাল এবং গার্বেজ দর্শন এর পরিবর্তন।
বাংলাদেশের এ পরিবর্তন অর্ধ শতাব্দির জঞ্জাল বা গার্বেজ। এ পরিবর্তন শুধু হাসিনার বিদায় নয়। এর সাথে জড়িত রয়েছে মুজিববাদ এবং একটি জঘন্য পরিবারতন্ত্র, এবং বাকশালের মত জঘন্য গনতন্ত্র বিরোধী, ধর্ম বিরোধী একটি ধীকৃত মতবাদ। এই মুজিববাদ আর বাকশালের ভিত্তি ছিল তথাকথিত বাম বা মার্কসবাদী লেলিনবাদী দর্শন। আর এই মার্কসবাদী লেলিনবাদী বামদের সাথে একত্র হয়েছিল রামবাদি ভারতীয় আধিপত্যবাদ। আগেই যেমন বলেছি, বাম আর রামদের মিথ্যার সেই প্রাসাদে হাসিনার রাজত্ব ছিল একটি ইট মাত্র। হাসিনার সেই ইট টি ধ্বসে পড়েছে, সাথে আরো অনেকগুলো ইট ধ্বসেছে। কিন্তু বাম-রামদের সে প্রাসাদে হাসিনার ইটটি ধ্বসে পড়লেও অন্য ইট সুরকিগুলো বাম-রামদের ভগ্নাংশকে এখনো আটকে রেখেছে। তবে হাসিনা বা তার দোশরদের জন্য দুঃসংবাদ হলো বিশ^ব্যাবস্থায় হাসিনা দোসরদের যে প্রাসাদেও আস্তে আস্তে পতন আসছে।
নতুন এক ইতিবাচক পরিবর্তনের দিকে বিশ^
আরেকটা বড় ধরনের পরিবর্তন হলো, আমরা অনেক সময়ই শুনি বা বলি যে, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময় উপমহাদেশের আলেমরা ইংরেজী শিক্ষা হারাম বলেছিলেন। আমরা অনেকে আলেমদের সমালোচনা করি যে, সে সময় যদি ইংরেজী শিক্ষা হারাম না বলে মুসলমানরা ইংরেজী শিখতেন তাহলে মুসলমারা আরো সামনে এগুতে পারতো। ব্যাক্তিগতভাবে আমি এ ধরনের সমালোচনার সাথে দ্বীমত পোষন করি। কারণ আমি মনে করি আমাদেরকে প্রেক্ষাপট বিবেচনা করতে হবে। সমাজ বিজ্ঞানের অনেক কিছুকেই প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে দেখতে হয়। এমনকি ইসলামের কোরআন হাদীসের ব্যাখ্যা করার ব্যাপারেও প্রেক্ষাপট বিবেচনার গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ইংরেজী শিক্ষা সে সময় আলেমরা কেন হারাম বলেছিলেন কারণ সে সময় যারাই ইংরেজী শিখেছেন বা শিখতে বিলেত গিয়েছেন তারা বিলেত থেকে পুরো ইংরেজ হয়ে ফিরে এসেছেন, সাথে হয়ত ব্রিটিশ রমণী বা বিলেতী কুকুর নিয়ে এসেছেন। সেদিনকার সে প্রেক্ষাপটে ইংরেজী শেখার অনেক নেতিবাচক দিক ছিল। যার এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। ব্যারিস্টার মওদুদ বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত আলেমের সন্তান ছিলেন। ব্যারিস্টার মওদুদের পিতা মাওলানা মমতাজের মত গভীর ক্লাসিক্যাল ইলম সম্পন্ন আলেম পাওয়া দুষ্কর। হ্যাঁ, তারপর এটা সত্য ইংরেজী একটা ভাষা মুসলমানরা নিজেদের পরিচয় এবং ঐতিহ্য বজায় রেখেও ইংরেজী শিখে অবদান রাখতে পারতো।
মিশরের বিখ্যাত লেখক এবং ইসলামী চিন্তাবিদ সাইয়েদ কুতুব ১৯৪৮-৫০ আমেরিকার কলোরাডো রাজ্যে লেখাপড়া করতে এসেছিলেন। কিন্তু তিনি যুক্তরাষ্ট্রের এবং পাশ্চাত্যের কঠোর সমালোচক ছিলেন। তিনি তার একাধিক লেখায় পাশ্চাত্যের বিরোধীতা করেছেন। তেমনিভাবে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী ও কিন্তু পাশ্চাত্যের কঠোর সমালোচনা করে বই লিখেছেন। পাশ্চাত্য সভ্যতা ও ইসলাম এই শিরোনামে।
কিন্তু আজকের যুগে সবচে বড় যে পরিবর্তন এসেছে সেটা হলো ভালো ইংরেজী জানা আলেমরা সারা বিশে^ ইসলামী শিক্ষা এবং প্রচারে অনেক বেশী অবদান রাখছেন। আমেরিকার বিখ্যাত ইসলামী স্কলার শায়খ ইয়াসির কাজী/কাদী যিনি একদিকে মদীনা বিশ^বিদ্যালয়ের ইতিহাসে অন্যতম মেধাবী ছাত্র ছিলেন অপরদিকে যুক্তরাস্ট্রের বিশ^খ্যাত ইয়েল বিশ^বিদ্যালয় থেকে পি এইচ ডি করেছেন। তেমনিভাবে দেওবন্দী সিলসিলায় পড়াশোনা করা যুক্তরাষ্ট্রে ওস্তাদ নোমান আলী খান সারা বিশে^ ইসলামী দাওয়াতী কাজে বিশেষ ভুমিকা রাখছেন। অপরদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিশিষ্ট আলেম যিনি একদিকে মদীনা বিশ^বিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট অপরদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়েও শুধু ইংরেজী ভাষায়ই পারদর্শি নন, তিনি আমেরিকা এবং পাশ্চাত্য সভ্যতার রগ রেশা জানেন এবং বুঝেন। এমনকি বাংলাদেশে বাংলা ভাষায় বেশ কিছু তরুন স্কলার তৈরি হয়েছে যারা ভাল ইংরেজী জানেন, পাশ্চাত্য সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রাখেন। আসিফ আদনান নামে এক তরুনের আলোচনা
এবার আসি ম্যনেজিং ট্রাঞ্জিশন প্রসংগে। ব্রিডস এর ট্রাঞ্জিশন মডেল এর দিকে যদি আমরা তাকাই আমরা দেখি যে কোন ট্রাঞ্জিশন এ তিনটি পর্যায় থাকে প্রথমটি হলো পুরনো পর্যায়ের অবসান, বা এন্ডিং জোন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের দুঃশাসন আর হাসিনার উপর ভর করা মতিয়া, ইনু, মেনন, মাহফুজ আনাম, মতিউরদের বুদ্ধি বৈকল্য আদর্শের অবসান। যেখানে আছে প্রবন্ড ধাক্কা, দুঃখ ভারাক্রান্ত, ক্ষোভ, রাগ, অবিশ^াস্য, মানি না, ভয়। পতিত পালানো এবং বিদেশে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ, ছাত্র লীগ, সাবেক বাম, সাবেক মার্কিস্টদের অবস্থান। এরা রাগে ক্ষোভে, দুঃখ ভারাক্রান্ত হবে, বিশ^াস করতে পারবে না যে হাসিনা আসলেই পালিয়ে গেছে, কোন ক্রমেই মানতে পারবে না এবং চাইবে না।
দ্বিতীয় পর্যায় হলো নিউট্রাল জোন যেখানে রয়েছে কনফিউজান, বিভ্রান্তি, দিশেহারা, হতাশ, সন্দেহপ্রবন, উদাসীন। যেখানে রয়েছে পুরো জাতি, যেখানে রয়েছে বিপ্লবীদের একটি অংশ, পরাজিতদের একটি অংশ
তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছে নিউ বিগিনিং যেখানে রয়েছে বিজয়ের আনন্দ উত্তেজনা, উৎফুল্ল
প্রথম আর দ্বিতীয় পর্যায় কঠিন। পরাজিতরা স্বভাবতই প্রথম পর্যায়ে থাকে তারা কখনো বিশ^াসই করতে পারে না, কি থেকে কি হয়ে গেল!! কেন এমন হলো, কি অপরাধ আমার??!! কি করেছি আমি, হোয়াই মী? আমাকে কেন এমন করা হলো? আমি তো কোন অন্যায় করিনি।!!
এটা ব্যাপারে একটি ঘটনা বলি, এমন ঘটনা আপনাদের অনেকের জীবনেই হয়তো ঘটেছিল। আমি তখন অনেক ছোট সে বছর কোরবানীর জন্য বড় সড় একটা বলদ গরু কেনা হয়েছিল। গরুটা বেশ শক্তিশালি ছিল। ঈদের দিন গরুটা যখন কোরবানী দেয়া হচ্ছিল বলদটার গলা অর্ধেক কাটা অবস্থায়ই গরুটা লাফ দিয়ে উঠে দাড়াঁয় এবং পালানোর চেষ্টা করে এমনকি দেীড়াতে থাকে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আওয়ামী গরুদের লাফানী দেখে বারবার আমার সেই বলদটার কথা মনে পড়ে।
ট্রাঞ্জিশনাল থিউরি অনুযায়ী এরা রাগে ক্ষোভে ফেটে পড়বে, চিৎকার মেতামেতি করবে, দুঃখ ভারাক্রান্ত হবে চোখের পানি ফেলবে, বিশ^াস করতে পারবে না যে হাসিনা আসলেই পালিয়ে গেছে, স্বপ্নে দেখবে হাসিনা টুপ করে চলে আসবে। এটাই তো স্বাভাবিক।
দ্বিতীয় পর্যায়ে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্তিতে ভুগবে, দিশেহারা হবে, হতাশ হবে, ডঃ ইউনুসকে বিশ^াস করতে পারবে কষ্ট হবে, সরকারকে বিশ^াস করতে পারবে না, জেনারেল ওয়াকারের প্রতি সন্দেহপ্রবন থাকবে, ওয়াকার আবার মইন ফখরুলের মত বেইমানী করে বসে নাকি, ওয়াকার তো হাসিনারই লোক, চুপ্পু আবার কি করে বসে।
যেখানে রয়েছে পুরো জাতি, যেখানে রয়েছে কিবপ্লবীদের একটি অংশ, পরাজিতদের একটি অংশ
コメント